মহাশূন্যে গুলি ছুঁড়লে কি হবে?
পৃথিবীতে গুলি ছোঁড়া আর মহাশূন্যে গুলি ছোঁড়ার মাঝে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। মহাশূন্যে গুলি করলে কি কি ঘটনা ঘটতে পারে সেগুলি জেনে নেয়া যাক।
➤শব্দ না শোনা
দুটি ভিন্ন পরিবেশে গুলি ছুঁড়লে সর্বপ্রথম যে পার্থক্যটি পরিলক্ষিত হবে তা হলো শব্দে। পৃথিবীতে গুলি করলে সেটি খুব জোরালো একটা শব্দ তৈরি করে। কিন্তু মহাশূন্যে গুলির কোনো শব্দ পাওয়া যাবে না। কারন, শব্দ স্থানান্তরের জন্য মাধ্যম প্রয়োজন। পৃথিবীতে সেই মাধ্যম হলো বায়ু। বাতাদের মাধ্যমে শব্দতরঙ্গ আমাদের কানে এসে পৌঁছায় বলেই শব্দ শুনি। কিন্তু মহাশূন্যে যেহেতু বায়ু নেই, তাই সেই গুলি ছোঁড়ার শব্দ শোনা যাবে না।
আরো পডুনঃ ইতিবাচক থাকুন ৯ টি উপায়ে
➤অন্তকাল চলমান থাকা
নিউটনের গতির ১ম অর্থাৎ জড়তার সূত্রানুযায়ী কোন বস্তু বাধাধাহীনভাবে অনন্তকাল চলতে থাকবে। মহাশূন্যে বাতাসের বাধা নেই, সুতরাং বের হওয়া গুলি এবং যিনি ছুঁড়েছেন উভয়ই সমবেগে ভিন্ন গতিতে বিপরীত দিকে যেতে থাকবেন যদিনা তাদের উপর আর কোন প্রতিরোধক কাজ না করে।
➤বন্দুকের উল্টোদিকে ছিটকে যাওয়া
মহাশূন্যে যিনি বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়বেন,তাকে অদ্ভুত এক পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।
নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী, "প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে"। এই অনুযায়ী বন্দুক তাক করে গুলি ছোড়ার সাথে সাথেই বন্দুক থেকে গুলি বের হওয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়ায়, যিনি গুলি ছুড়েছেন তিনি বন্দুকের উল্টো দিকে ছিটকে যাবেন।
যদি প্রশ্ন করা হয় যে এই ছিটকে যাওয়ার গতি কেমন হতে পারে? এর জবাব দিতে একটি AK-47 এর সঙ্গে একটি Smith and welson পিস্তলের তুলনা করা যেতে পারে। তবে এখানে নিউটনের গতির ২য় সূত্র অর্থাৎ ভরবেগের সূত্র চলে আসে।
AK-47 থেকে বের হওয়া গুলির গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১,৬০০। তাই হিসাব অনুযায়ী মহাশূন্যে AK-47 থেকে গুলি ছোড়ার পর, যিনি গুলি ছুড়বেন তাকে ঘণ্টায় প্রায় ০.০৬৮ মাইল গতিবেগে উল্টো দিকে ছিটকে যেতে হবে।
অন্যদিকে 0.50Cal এর Smith and welsonপিস্তলের গুলির গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় প্রায় ১,৩৩০ মাইল। অর্থাৎ, এর গুলির গতিবেগ AK-47 এর গুলির বেগের চাইতেও কম। কিন্তু Smith and welson বুলেটের ভর AK-47 এর বুলেটের ভরের প্রায় দ্বিগুণ।
এর ফলে Smith and welson পিস্তল থেকে গুলি ছুড়লে, Ak-47 থেকে গুলি ছোড়ার দ্বিগুণ গতিতে উল্টো দিকে ছিটকে যেতে হবে এবং সেই গতি হবে ঘণ্টায় প্রায় ০.১৩৬ মাইল। যা প্রায় আধাঘণ্টায় একটি ফুটবল স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণের জন্য যথেষ্ট।
➤কাছাকাছি গ্রহের অভিকর্ষের প্রভাব
সুতরাং যে অস্ত্রই ব্যবহার করা হোক না কেন, মহাশূন্যে নিশানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। দেখা যাবে শেষ পর্যন্ত সামনের দিকে ছোড়া গুলি উল্টো পথে ঘুরে নিজের পিঠেই বিদ্ধ হতে পারে! মহাশূন্যে যেহেতু কোনো বাধা নেই, তাই যিনি গুলি ছুঁড়েছেন সেই গুলি কোনো একটা গ্রহের কক্ষপথ ঘুরে সেই গ্রহের অভিকর্ষের প্রভাবে দিক পাল্টে তার পিঠেই গুলিটি বিদ্ধ হতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না।
আরো পডুনঃ পদার্থবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয় সূত্রাবলী (পিডিএফ-গুগল ড্রাইভ)