নবম-দশম শ্রেনীর পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়- গতি নিয়ে আজ আলোচনা করা হবে। গতি- অধ্যায়ের বিস্তারিত বর্ণনা পোষ্টে দেয়া হবে। আর সংক্ষিপ্ত নোটের পিডিএফ থাকবে শেষে। তাই হ্যান্ডনোট পড়ার আগে অবশ্যই এখানে বিস্তারিত পড়ে নেবেন কষ্ট করে।
পদার্থবিজ্ঞান (নবম-দশম)
২য় অধ্যায়ঃ গতি
গতি- অধ্যায়টি থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকবেই। কেননা এটি পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলোর একটি। এই চ্যাপ্টারের উপর পরিষ্কার ধারণা রাখা আবশ্যক। বিস্তারিত বর্ণনা নিচে দেয়া হলো।
গতি কি?
সংজ্ঞাঃ সময়ের সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনকে গতি বলে।
এর অর্থ কি? তার মানে হলো, যদি কোন বস্তু A অবস্থান থেকে B অবস্থানে সরে যায় তা হলো তার অবস্থানের পরিবর্তন। এই পরিবর্তন তো একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হয়েছে। এই সময়ের সাপেক্ষে যে ঘটনাটি অবস্থান পরিবর্তন ঘটিয়েছে তাই হলো গতি।
গতির বিভিন্ন প্রকারভেদ
গতি বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন-
- রৈখিক গতিঃ বস্তুত সকল প্রকার গতিই রৈখিক গতির অন্তর্গত। কোন রেখা বরাবর বস্তুর গতিই হলো রৈখিক গতি।
এটি দুই প্রকার।
- সরলরৈখিকঃ সরলরেখা বরাবর কোন বস্তু গতিশীল থাকলে তার গতি হবে সরলরৈখিক। যেমন- ট্রেনের গতি, সোজা পথে হাঁটার গতি ইত্যাদি।
- বক্রগতিঃ বক্ররেখা বরাবর বস্তু গতিশীল থাকলে তা বক্রগতি হবে। যেমন- আকঁবাকা রাস্তায় হাঁটা, ঢিল ছোঁড়া ইত্যাদি।
- চলন গতিঃ "যদি কোন বস্তু এমনভাবে গতিশীল থাকে যার ফলে বস্তুটিতে থাকা সমস্ত উপাদান একই সাথে একই পথে গতিশীল, তবে তাকে চলন গতি বলা হবে।" যেমন- মানুষের হাঁটা, ফুটবলের গতি, গাড়ির গতি ইত্যাদি।
এখানে, মানুষ যখন হাঁটে তখন তার সমস্ত উপাদান একই সাথে গতির দিকে যেতে যাকে। এমনতো হয় না যে তুমি হাঁটছো আর তোমার হাত কিংবা পা পেছনে পড়ে গেছে। অর্থাৎ গতিশীল বস্তুর সামগ্রিক উপাদান একই সাথে গতিশীল হবে।
- ঘূর্ণন গতিঃ "একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে যদি কোজ বস্তু গতিশীল হয় তবে তা হলো ঘূর্ণন গতি।" যেমন- ঘড়ির কাঁটার গতি, সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর গতি।
এখানে ঘড়ির কাঁটার শীর্ষভাগ এর কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরতে থাকে। আবার পৃথিবীও সূর্যকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে ঘুরে। এটিও ঘূর্ণন গতি। - পর্যায়বৃত্ত গতিঃ "যদি কোন বস্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি বিন্দুকে একইদিক কিংবা উভয়দিক থেকে অতিক্রম করে, তবে তাকে পর্যাবৃত্ত গতি বলা হয়।" যেমন- ঘড়ির কাঁটার গতি, সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর গতি, পেন্ডুলাম ঘড়ি কিংবা দোলনার গতি।
একেও আমরা দুই প্রকারে ভাগ করতে পারি।
- সাধারন পর্যায়বৃত্ত গতিঃ যদি বস্তুটি একইদিক থেকে বিন্দুটিকে অতিক্রম করে তবে তা সাধারন পর্যায়বৃত্ত গতি। যেমন- ঘড়ির কাঁটা, পৃথিবীর গতি।
এখানে ঘড়ির কাঁটা সাধারন একই দিক থেকে বারবার ১২ কিংবা অন্য বিন্দুগুলোকে অতিক্রম করে। পৃথিবীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে।
- স্পন্দন গতিঃ যদি বস্তুটি উভয় দিক থেকে বারবার বিন্দুটিকে অতিক্রম করে তবে তা স্পন্দন গতি হবে। যেমন- দোলনার গতি, পেন্ডুলামের গতি।
এখানে, দোলনাটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের অর্ধেক থাকে একপাশে, বাকি অর্ধেক অন্যপাশে। এটা পরীক্ষা করে দেখতে পারো।
সকল স্পন্দন গতিই পর্যায়বৃত্ত গতি। কিন্তু সকল পর্যায়বৃত্ত গতি স্পন্দন গতি নয়!
স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশি
প্রকৃতির সমস্ত রাশিমালাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশি।
- স্কেলার রাশিঃ যে সমস্ত রাশির শুধু মান আছে কিন্তু দিক নেই, তাদের স্কেলার রাশি বলে। যেমন- ভর, সময়, তাপমাত্রা, দূরত্ব ইত্যাদি।
উদাহরণ স্বরূপ, তোমার ভর ৪৫ কেজি। এই ৪৫ হলো একটি মান, কিন্তু দিক নয়। এটা তো বলে না, উত্তর দিকে তোমার ভর ৪৫ কেজি!
- ভেক্টর রাশিঃ যে সমস্ত রাশির মান ও দিক দুটিই আছে, তাদের ভেক্টর রাশি বলে। যেমন- কাজ, ওজন, সরন, ত্বরণ ইত্যাদি।
উদাহরণ স্বরূপ, যদি বলা হয় তুমি ১০ মিটার হেঁটেছো। তাহলে বোঝা যাবে না তুমি ঠিক কোন দিকে হেঁটেছো। কিন্তু যদি বলা হয় তুমি পূর্ব দিকে ১০ মিটার হেঁটেছো, তাহলে এতে একটি নির্দিষ্ট দিকে (পূর্ব) হাঁটা বোঝাচ্ছে। এটিই ভেক্টর রাশি।
স্কেলার- মান ✅, দিক ❌
ভেক্টর- মান ✅, দিক ✅
দূরত্ব ও সরন
- দূরত্বঃ "সময়ের সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাকেই দূরত্ব বলে।" দূরত্ব স্কেলার রাশি। এর দিক যেকোন দিকে হতে পারে।
যেমন- আগের উদাহরণে তুমি ১০ মিটার হেঁটেছো। এখানে বলা হয়নি কোন দিকে হেঁটেছো। তার মানে তুমি যেকোন দিকেই ১০ মিটার অতিক্রম করেছিলে।
- সরনঃ "সময়ের সাপেক্ষে নির্দিষ্ট দিকে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাকেই সরন বলে।" সরন হলো ভেক্টর রাশি। এর নির্দিষ্ট দিক থাকে।
যেমন- পূর্ব দিকে তুমি ১০ মিটার হেঁটেছো। তার মানে এখানে একটি নির্দিষ্ট দিক প্রকাশ পেয়েছে।
দূরত্ব- স্কেলার, দিক❌
সরন- ভেক্টর, দিক✅
দ্রুতি ও বেগ
- দ্রুতিঃ "সময়ের সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনের হার হলো দ্রুতি।" একে v দ্বারা প্রকাশ করা হয়। v মানে Velocity. এটি স্কেলার রাশি। কারন দ্রুতি প্রকাশ করতে দিকের প্রয়োজন নেই। দ্রুতির রাশিমালা দেখে নিচে দেয়া হলো।
ধরি, s = অতিক্রান্ত দূরত্ব, t = প্রয়োজনীয় সময়। সুতরাং দ্রুতি v হলে লেখা যায়,
দ্রুতির একক ms-1. এটি দ্বারা প্রতি সেকেন্ডে অবস্থান বোঝায়।
কোন বস্তুর দ্রুতি 5ms-1 দ্বারা বোঝায়, যেকোন দিকে প্রতি সেকেন্ডে বস্তুটি 5 মিটার দূরত্ব অতিক্রম করছে।বেগ বা দ্রুতির সূত্র, একক ও মাত্রা
- বেগঃ "সময়ের সাপেক্ষে নির্দিষ্ট দিকে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনের হার হলো বেগ।" এটি ভেক্টর রাশি। মূলত, দ্রুতি ও বেগের মধ্যে শুধু দিক ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। রাশিমালা, একক, মাত্রা সবকিছুই একই।
কোন বস্তুর বেগ 5ms-1 দ্বারা বোঝায়, নির্দিষ্ট দিকে প্রতি সেকেন্ডে বস্তুটি 5 মিটার দূরত্ব অতিক্রম করছে। - গড়বেগঃ আঁকাবাঁকা পথে বস্তুর বেগ সমান হয় না। এক্ষেত্রে গড়বেগ হিসাব করা হয়।
গড়বেগ= মোট অতি.দূরত্ব ÷ মোট সময়
অথবা,
গড়বেগ = (আদিবেগ+শেষবেগ) ÷ ২
গড়বেগের সমীকরণ
দ্রুতি- স্কেলার, দিক❌
বেগ- ভেক্টর, দিক✅
ত্বরণ ও মন্দন
- ত্বরণঃ "সময়ের সাপেক্ষে বস্তুর বেগ পরিবর্তনের হারকে ত্বরণ বলে।" ত্বরণ ভেক্টর রাশি। কেননা এটি বেগের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
ত্বরণ দুই প্রকার।
- ধনাত্মক ত্বরণঃ বস্তুর বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকলে সেখানে ধনাত্মক ত্বরণ ঘটে। ত্বরণ বলতে আমরা একেই বুঝি। এর মান সবসময় ধনাত্মক হয়।
- ঋণাত্মক ত্বরণ বা মন্দনঃ বস্তুর বেগ কমতে থাকলে সেখানে ঋণাত্মক ত্বরণ ঘটে। একে মন্দন বলা হয়। এর মান ঋণাত্মক।
- ত্বরণের রাশিমালাঃ ত্বরণকে 'a' (acceleration) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। বস্তুর আদিবেগ u, শেষবেগ v এবং সময় t হলে ত্বরণ হবে:
ত্বরণের সূত্র
ত্বরণের একক হলো ms-2. এর অর্থ হলো, বস্তুটির বেগ প্রতি সেকেন্ড ms-1 করে পরিবর্তিত হচ্ছে।ত্বরণের একক ও মাত্রা
কোন বস্তুর ত্বরণ 3ms-2 বলতে বোঝায়, বস্তটির বেগ প্রতি সেকেন্ডে 3ms-1 করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবার কোন বস্তুর মন্দন 3ms-2 বলতে বোঝায়, বস্তটির বেগ প্রতি সেকেন্ডে 3ms-1 করে হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ বস্তুটি থেমে যাচ্ছে।
পড়ন্ত বস্তুর সূত্র (গ্যালিলীওর সূত্র)
এতক্ষন যা আলোচনা হলো সবকিছুই ছিলো ভূমিতে গতিশীল বস্তুসমূহের মধ্যে গতির প্রভাব নিয়ে। কিন্তু যখন উঁচু হতে কোন বস্তু পড়ে কিংবা পড়ন্ত বস্তুসমূহের বেলায় কি হবে? বিজ্ঞানী গ্যালিলী এই ধরনের গতির তিনটি সূত্র প্রদান করেন।
- ১ম সূত্রঃ "একই উচ্চতা থেকে পড়ন্ত সকল বস্তু সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করে।"
এই সূত্রের সত্যিকার রূপ দেখতে হলে মহাশূন্যে যেতে হবে কিংবা ল্যাবরেটরিতে যেতে হবে। কেন? তা বলছি।
এই সূত্রে বলা হলো, একই উচ্চতা ধরে নিলাম ১০ মিটার উচ্চতা (প্রায় ৩ তলা ভবন) থেকে একটি পাথর ও পালক ফেলা হলো। সূত্রমতে দুটিই সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করবে। তার মানে দুটিই একই সময়ে ভূমিতে এসে পড়বে।
কিন্তু বাস্তবজীবনে কি ঘটে? পাথরটিই আগে এসে পড়ে। এটা কেন? এখানে 'বল'-এর প্রভাব আছে। বাতাসের বাধা আছে।
['বল'- এর অধ্যায়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে]
যদি বাতাসের বাধা না থাকতো, তবে দুটি বস্তুই সমান সময়ে ভূমিতে এসে পোঁছাতো। এই পরীক্ষাটি যদি ল্যাবে বায়ুশূন্য চেম্বারে করা হয় তবে সেখানে দুটিই একই সাথে ভূমিতে পড়বে। - ২য় সূত্রঃ "নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পড়ন্ত বস্তুর একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রাপ্ত বেগ ঐ সময়ের সমানুপাতিক।"
সুতরাং, v ∝ t
অর্থাৎ, বস্তুর বেগ সময়ের উপর নির্ভরশীল।পড়ন্ত বস্তুর ২য় সূত্রের সমীকরণ - ৩য় সূত্রঃ "নির্দিষ্ট উচ্চতা হতে পড়ন্ত বস্তুর কোন সময়ের অতিক্রান্ত দূরত্ব ঐ সময়ের বর্গের সমানুপাতিক।"
অর্থাৎ অতিক্রান্ত দূরত্ব h হলে আমরা লিখতে পারি,
h ∝ t2পড়ন্ত বস্তুর ৩য় সূত্রের সমীকরণ
এই তিনটি সূত্রকে গ্যালিলীওর গতির সূত্র বলা হয়। নবম-দশম শ্রেনীতে আপাতত এইটুকুই আলোচনা করা হয়েছে। এর বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে এইচএসসি লেভেলে।
'গতি' অধ্যায়ের এই বেসিক আলোচনাগুলোই আছে বইতে। এখানে আমি চেষ্টা করেছি সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। ভূলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ থাকলো এবং আমাকে জানাতে পারো।
এই অধ্যায়ের পিডিএফ আমি গুগল ড্রাইভে আপলোড করেছি। সেখান থেকে ডাউনলোড করে নেবে। উপরের বিস্তারিত পড়ে থাকলে আশা করি হ্যান্ডনোট বুঝতে সমস্যা হবে না।
হ্যান্ডনোটে এই টপিকগুলোর সংজ্ঞা, সূত্রের প্রতিপাদন, গতির সকল মৌলিক সমীকরণ আলোচনা করা হয়েছে।
পিডিএফ ডাউনলোড
SSC Physics Ch 2
Size: 4.6MB
জ্ঞানকে কখনো নিজের মাঝে আবদ্ধ করে রাখতে নেই।
তোমার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করো। আর হ্যাঁ, নেক্সট কোন অধ্যায়গুলোর নোট লাগবে জানাতে পারো কমেন্টবক্সে।
ধন্যবাদ।
এসএসসি'২২ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি (10 Minute School)
শেষ মুহূর্তে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে হিমশিম খাওয়া? আর নয় চিন্তা! টেন মিনিট স্কুল নিয়ে এলো এসএসসি’২২ পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কোর্স!
কোর্সে থাকছেঃ
- ৫ টি বিষয় ( সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন )
- ৩৫টি লাইভ ক্লাস
- ৩৫টি লেকচার শিট