রুবিক্স কিউবের ইতিহাস
বসন্তকাল, ১৯৭৪। একজন তরুণ হাঙ্গেরিয়ান আর্কিটেক্ট তার ছাত্রদের নিয়ে ত্রিমাত্রিক পথে চলাচল করতে সক্ষম একটি কিউব মডেল করার উপায় খুঁজে বের করার জন্য মগ্ন হয়ে উঠেছেন। দিনের পর দিন চেষ্টা করতে থাকলেন তারা। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর প্রায় ছয় মাসের চেষ্টায় কাঠ, কাগজ, রাবার ব্যান্ড, আঠা এবং কাগজের ক্লিপ দ্বারা তারা এমন একটি স্ট্রাকচার তৈরি করতে সক্ষম হলেন যেটি ত্রিমাত্রিক দিকে চলনক্ষম। তারা চমৎকার এই কিউবটির নাম দিলেন “Bűvös kocka" বা, "Magic Cube".
ইতিহাস রচনাকারি সেই তরুন শিক্ষকের নাম আর্নো রুবিক, যার নাম অনুসারেই ম্যাজিক কিউবটি পরবর্তিতে "রুবিক্স কিউব" নামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। হ্যাঁ ধরতে পেরেছেন, কথা হচ্ছে বর্তমান সময়ের বহুল জনপ্রিয় "খেলনা" রুবিক্স কিউবের।
রুবিক্স কিউব আবিস্কারের পরবর্তিতে এটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এটি ৩৫০ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বে অসংখ্য প্রতিযোগিতার সূত্রপাত হয়েছে রুবিক্স কিউব নিয়ে। কে কত দ্রুত এই ধাধার জট খুলতে পারেন তা নিয়ে মেতে ওঠে নানান বয়সি প্রতিযোগিরা। তবে কিশোর-কিশোরিদের কাছে এটি এক অন্যরকম আবেগের নাম।
আর্নো রুবিক তার বই "Cubed: The Puzzle of Us All" বইটিতে রুবিক্স কিউবের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন, বলেছেন কেন কিউবটি এতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে কিউবটির সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টি হল এটি মেলানোর সম্ভ্যাব্য পদ্ধতির সংখ্যা। একটি আশ্চর্য ও মজার তথ্য দিই। গাণিতিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, একটি ৩x৩ রুবিক্স কিউবে ৪৩,২৫২,০০৩,২৭৪,৪৮৯,৮৫৬,০০০ বা ৪৩ কুইন্টিলিয়ন সংখ্যক সম্ভাব্য ভেরিয়েশন থাকতে পারে!!!
হ্যা, কিউবটি দেখে প্রথমত খুব সাধারণ কিছুই মনে হয়ে থাকে সবার কাছে৷ প্রথম দেখায় মনে হতে পারে এ আর এমন কি। ছয় পৃষ্ঠে ছয় ভিন্ন রঙ এর বিন্যাস তৈরি করা কতটা জটিল হতে পারে সেটি আপনি বুঝতে পারবেন যখন মেলানো শুরু করবেন।
কিউবের প্রতিটি পাশে নয়টি রঙিন বর্গক্ষেত্র রয়েছে। প্রারম্ভিক অবস্থায়, প্রতিটি পাশে একটি অভিন্ন রঙ রয়েছে - লাল, সবুজ, হলুদ, কমলা, নীল ও সাদা। প্রথমে অন্য কাউকে কিউবটিকে বিভিন্নদিকে মোচড় দিয়ে রঙ এর বিন্যাসটি এলোমেলো করে দিতে বলুন। এবার শুরু করুন কিউবটিকে আগের মত ছয় পৃষ্ঠে ছয়টি ভিন্ন রঙ এর বিন্যাসে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। হ্যা, আপাত দৃষ্টিতে এই সহজ কাজটিই যখন আপনি করতে যাবেন তখন বুঝতে পারবেন রুবিক্স কিউব মেলানো কতটা জটিল হতে পারে।
এর জটিলতা ব্যাখ্যা করার জন্য নিচের ছোট্ট উদাহরণটিই যথেষ্ট।
আর্নো কিউব রুবিক্স কিউব আবিস্কারের পর এক অদ্ভুত সমস্যার সম্মুখীন হন। নিজের আবিস্কার করা কিউবটিই তিনি আর কিছুতেই মেলাতে পারছিলেন না। বর্তমান সময়ে অসংখ্য ভিডিও বা টিউটরিয়াল দেখে অল্প সময়েই আপনি হয়তো রুবিক্স কিউব মেলানোর কৌশল শিখে ফেলতে পারবেন। কিন্তু আর্নো কিউবের কাছে সেটি ছিল তার আবিস্কারকে নতুন করে আবিস্কার করার মতই। হাজার চেষ্টা করেও তিনি কিছুতেই এটি মেলাতে পারছিলেন না।
অবশেষে প্রায় একমাস প্রচেষ্টার পর তিনি কিউবটির ধাধা ভেদ করতে পেরেছিলেন এবং সর্বপ্রথম এটিকে মেলাতে সক্ষম হয়েছিলেন। হ্যা, তার নিজের ধাঁধাটি সমাধান করতে তার পুরো এক মাস লেগেছিল। এবার নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন কিউবটির ধাধা ভেদ করা কতটা জটিল হতে পারে। যদি না আপনি কোন টিউটোরিয়ালের সাহায্য নিয়ে থাকেন, ধরে রাখুন এটি আপনার বুদ্ধি ও ধৈর্যের সর্বোচ্চ পরিক্ষা নিয়ে নেবে।
তবে রুবিক্স কিউবের গতানুগতিক ৩x৩ সংস্করন ছাড়াও আরো কিছু সংস্করন রয়েছে৷ যেমনঃ ২x২, ৪x৪ বা ৫x৫ ইত্যাদি। আবার প্রচলিত আকৃতির ছাড়াও পিরামিড আকৃতির কিউবও রয়েছে। তবে কিউব ফর্মেশনের সংখ্যা যত বাড়ে, এটি সমাধান করা আরো বেশি জটিল হয়ে ওঠে।
আরো দেখো-

