পঞ্চগড় জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
জেলা পরিচিতি (পর্ব-২): পঞ্চগড়
ইতিহাস
পঞ্চগড় জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা।
প্রাচীনকালে পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের অর্ন্তগত ‘পঞ্চনগরী’ নামে একটি অঞ্চল ছিল। কালক্রমে পঞ্চনগরী ‘পঞ্চগড়’ নামে আত্মপ্রকাশ করে।
আরেকটি বহুল প্রচলিত ধারণা মতে, এই অঞ্চলের পাঁচটি গড়ের সুস্পষ্ট অবস্থানের কারণেই "পঞ্চগড়" নামটির উৎপত্তি। গড়গুলো হলো:
ভিতরগড়, মিরগড়, রাজনগড়, হোসেনগড় ও দেবনগড়।
ভৌগলিক অবস্থান
পঞ্চগড় জেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলা, উত্তর-পশ্চিমে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা, দক্ষিণে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলা, পশ্চিমে ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলা এবং পূর্বে নীলফামারী জেলা অবস্থিত।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের জন্য স্যার সিরিল রেডক্লিফের নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী পঞ্চগড় জেলার তিনদিকে প্রায় ১৮০ মাইল বা ২৮৮ কি.মি. জুড়ে ভারতের সীমান্ত অবস্থিত। সমুদ্রতল থেকে এ জেলার উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট (৪৬ মিটার)।
পঞ্চগড়ে ২৩টি নদী রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রধান নদী হলো করতোয়া, তিস্তা, নাগর, মহানন্দা, টাঙ্গন, দহুক, পাথরাজ, ভুলি, তালমা, চাওয়াই, কুরুম, তিরোনি এবং চিলকা নদী।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
পঞ্চগড় জেলায় মোট পাঁচটি উপজেলা রয়েছে। এগুলো হলো:
- আটোয়ারী উপজেলা
- তেতুলিয়া উপজেলা
- দেবীগঞ্জ উপজেলা
- পঞ্চগড় সদর উপজেলা
- বোদা উপজেলা
পঞ্চগড় জেলায় সংসদীয় আসন আছে ২টি। যেখানে পঞ্চগড়-১ আসনটি এ জেলার সদর উপজেলা, তেতুলিয়া উপজেলা ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে গঠিত যেটি জাতীয় সংসদের ১নং ও জেলার ১ম সংসদীয় আসন।
পঞ্চগড় জেলা মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মোট ৪টি মুক্তাঞ্চলের মধ্যে পঞ্চগড় জেলা ছিল একটি। সীমান্ত পরিবেষ্টিত হওয়ায় ও ভৌগোলিক কারণে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় এ মুক্তাঞ্চলটি যুদ্ধের গতি প্রকৃতি নির্ণয়ে ও পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান
পঞ্চগড় জেলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হলো:
- পঞ্চগড় সুগার মিলস লিঃ (১৯৬৯)
- জেমকন লিমিটেড (১৯৯৩)
- জেমজুট লিমিটেড (২০০৩)
- মার্শাল ডিস্টিলারী (১৯৯৬)
- পঞ্চগড় সুগার মিলস লি:
- খাম্বা লিমিটেড
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
রংপুরের উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মধ্যে রয়েছে:
- মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ
- বিষ্ণু প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়
- পঞ্চগড় সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
- বোদা পাইলট মডেল স্কুল এন্ড কলেজ
- মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর (একমাত্র রপ্তানিমুখী স্থলবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত)
রাজধানী ঢাকার সাথে ৩টি এবং রাজশাহীর সাথে ১টি আন্ত:নগর ট্রেন চালু আছে।
পঞ্চগড় জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুনভাবে যোগ হয়েছে চা চাষ। বাংলাদেশে সমতলভূমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেবল মাত্র এই জেলাতেই চা চাষ হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
পঞ্চগড় জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন:
- ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান
- বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম
- কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ
- মির্জা গোলাম হাফিজ
- চিত্রনায়ক আব্দুর রহমান
- ডা. সলিমুল্লাহ
- গমির উদ্দীন প্রধান
- ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমিরউদ্দীন সরকার
- মো. মোজাহার হোসেন
- মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ
- বাবু বিষ্ণু প্রসাদ মিশ্র
- ডা: এম. জহিরউদ্দিন আহমেদ
- মকবুলার রহমান
- মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন (রেলমন্ত্রী)
দর্শনীয় স্থানসমূহ
পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে:
- ভিতরগড়
- মহারাজার দিঘী
- বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির
- সমতল ভূমিতে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত চা বাগান
- মির্জাপুর শাহী মসজিদ
- মির্জাপুর ইমামবাড়ি
- বার আউলিয়ার মাজার
- গোলকধাম মন্দির
- জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি
- আনন্দধারা রিসোর্ট
- হিমালয় বিনোদন পার্ক
- রাবার ড্যাম
- ময়নামতির চর
- বালু মহাল
- ছেপড়াঝাড় মসজিদ
- তেঁতুলিয়া ডাক-বাংলো
- তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণার
- বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর
- রকস্ মিউজিয়াম
- মহারাণী বাঁধ
- বাংলাদেশ-ভারত মিলনমেলা
আরো দেখো:
