রংপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
জেলা পরিচিতি (পর্ব-১): রংপুর
ইতিহাস
রংপুর, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি জেলা। উপজেলার সংখ্যানুসারে রংপুর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। রংপুর শহর ১৭৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিভাগীয় সদর দপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এ জেলা স্বাধীনতার পরে নতুন করে গঠিত হয় ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সালে। ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল।
পূর্বের ‘রঙ্গপুর’ থেকেই কালক্রমে রংপুর নামটি এসেছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে এই অঞ্চলে মাটি উর্বর হবার কারণে ইংরেজরা এখানে নীলের চাষ শুরু করে। সেই নীলকে স্থানীয় লোকজন রঙ্গ নামেই জানত। কালের বিবর্তনে সেই রঙ্গ থেকে রঙ্গপুর এবং তা থেকেই আজকের রংপুর।ভৌগলিক অবস্থান
রংপুর জেলার উত্তরে লালমনিরহাট, পূর্বে কুড়িগ্রাম, দক্ষিণ-পূর্বাংশে গাইবান্ধা, উত্তর-পশ্চিমাংশে নীলফামারী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে দিনাজপুর জেলার অবস্থান। এ জেলার মোট আয়তন ২,৩০৮ বর্গকিলোমিটার। তিস্তা নদী রংপুর জেলার উত্তর ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তকে লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রাম জেলা থেকে আলাদা করেছে।
রংপুর জেলাকে বৃহত্তর বঙ্গপ্লাবন ভূমির অংশ মনে করা হয়। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর গঠন দেশের অন্যান্য জেলা থেকে আলাদা।
এ জেলার প্রধান নদীগুলো হলো তিস্তা, যমুনেশ্বরী, ঘাঘট, করতোয়া, চিকলি ও আঁখিরা।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
এ জেলা ৭৬ টি ইউনিয়ন, ১৪৫৫টি মৌজা, ১ টি সিটি কর্পোরেশন, ৩টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এছাড়াও এ জেলায় ৮টি উপজেলা রয়েছে। এগুলো হল:
কাউনিয়া, গংগাচড়া, তারাগঞ্জ, পীরগঞ্জ, পীরগাছা, বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর এবং রংপুর সদর।
রংপুর জেলার কেল্লাবন্দ নামক স্থানে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে। যেখানে বিভিন্ন ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। যাদের মধ্যে রয়েছে আর.এফ.এল লিঃ, প্রাইম সনিক গ্রুপ, মিল্ক ভিটা বাংলাদেশ, আরডি মিল্ক সহ বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
রংপুরের উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মধ্যে রয়েছে:
- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৮),
- রংপুর কারমাইকেল কলেজ (১৯১৬),
- সরকারি বেগম রোকেয়া মহিলা কলেজ (১৯৬৪),
- রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (১৯৬৬),
- রংপুর ক্যাডেট কলেজ (১৯৭৭),
- রংপুর জিলা স্কুল (১৮৩২)
বিনোদন ও সংস্কৃতি
এ জেলায় হা-ডু-ডু, কাবাডি, লাঠি খেলা, দাঁড়িয়া বান্ধা, গোল্লাছুট, এক্কা-দোক্কা, বউ-ছুট, লুকোচুরি, চেংকুডারা বা চেংগু সহ বিভিন্ন ধরনের খেলা প্রচলিত রয়েছে।
কৃষি শিল্প
রংপুর অঞ্চলকে তামাকের জন্য বিখ্যাত বলা হয়। এছাড়াও রংপুরে প্রচুর পরিমাণ ধান-পাট-আলু ও হাড়িভাঙ্গা আম উৎপাদিত হয়। এ জেলার শেতাবগঞ্জে বিশ্ব সেরা শতরঞ্জি পাওয়া যায়।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
এ জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন-
- লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও ষষ্ঠ সেনাপ্রধান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী)
- রাজা জানকীবল্লভ সেন (রংপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান,শ্যামা সুন্দরী খাল এর উদ্যোক্তা)
- হেয়াত মামুদ (মধ্যযুগের কবি)
- বেগম রোকেয়া (বাংলার মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত)
- দেবী চৌধুরানী (ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত)
- দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী (ভাস্কর, চিত্রশিল্পী এবং ললিত কলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি)
- খান বাহাদুর শাহ্ আব্দুর রউফ (সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ)
- মশিউর রহমান (সাবেক প্রধানমন্ত্রী)
- আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম (বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি ও ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি)
- এম এ ওয়াজেদ মিয়া (খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাম্পত্য সঙ্গী)
- মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সেনাপ্রধান)
- মসিউর রহমান রাঙ্গা (জাতীয় পার্টির মহাসচিব)
- টিপু মুন্সি (বাণিজ্য মন্ত্রী)
- আনিসুল হক (লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক)
- ড. রাশিদ আসকারী (১২তম উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
- নাসির হোসেন (বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার)
- সানজিদা ইসলাম (বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সদস্য)
- সাজিদুল ইসলাম (ক্রিকেটার)
- রফিকুল হক (ছড়াকার এবং সাংবাদিক)
- আকবর আলী (ক্রিকেটার)
- রওশন এরশাদ (সাবেক ফার্স্ট লেডি)
- জি এম কাদের (সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান)
- মিসরাত জাহান মৌসুমী (বাংলাদেশী মহিলা ফুটবলার)
- মোহাম্মদ ইদ্রিস (বাংলাদেশী শিল্পী ও নকশাবিদ)
লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ
রাজা জানকীবল্লভ সেন
দেবী চৌধুরানী
এম এ ওয়াজেদ মিয়া
মশিউর রহমান
আনিসুল হক
হেয়াত মামুদ
বেগম রোকেয়া
নাসির হোসেন
রওশন এরশাদ
জি এম কাদের
টিপু মুন্সি
আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম
দর্শনীয় স্থানসমূহ
এ জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে:
- তাজহাট জমিদার বাড়ী (রংপুর সদর)
- ফণীভূষণ মজুমদারের জমিদার বাড়ি
- পায়রা চত্বর
- ভাঙ্গনি মসজিদ
- মিঠাপুকুর মসজিদ
- চন্ডীপুর মসজিদ
- কেরামতিয়া তিন গম্বুজ মসজিদ (রংপুর)
- ত্রিবিগ্রহ মন্দির
- ভিন্ন জগৎ বিনোদন পার্ক
- শাহ ইসমাইল গাজীর (রহ.) দরগাহ (কাটাদুয়ার)
- পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র (মিঠাপুকুর)
- কারমাইকেল কলেজ
- মন্থনা জমিদার বাড়ি
- ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি
- শ্রী জ্ঞানেন্দ্র নারায়ণ রায়ের জমিদার বাড়ি
- রংপুর চিড়িয়াখানা
- পায়রাবন্দ
- ঘাঘট প্রয়াস পার্ক
- চিকলির পার্ক
- আনন্দনগর
- দেবী চৌধুরাণীর পুকুর
- তিস্তা সড়ক ও রেল সেতু
- মহিপুর ঘাট
- মিঠাপুকুর শালবন
এছাড়াও এ জেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
আরো দেখো:
