ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
জেলা পরিচিতি (পর্ব-৩): ঠাকুরগাঁও
ইতিহাস
ঠাকুরগাঁও, সূর্যপূরী আম, জামালপুর জমিদারবাড়ি, বাংলাদেশের রুটির ঝুড়ি সহ আরো বিভিন্ন কারনে বিখ্যাত, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগে অবস্থিত একটি জেলা।
এ জেলার নামকরন সম্পর্কে যতদূর জানা যায় তা হলো:
টাংগন, শুক ও সেনুয়া বিধৌত এই জনপদের একটি ঠাকুর পরিবারের উদ্যোগে ব্রিটিশ শাসনামলে বর্তমান পৌরসভা এলাকার কাছাকাছি কোনো স্থানে একটি থানা স্থাপিত হয়। এই পরিবারের নাম অনুসারে থানাটির নাম হয় ঠাকুরগাঁও থানা।
"ঠাকুর" অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের সংখ্যাধিক্যের কারণে স্থানটির নাম ঠাকুরগাঁও হয়েছে।
ভৌগলিক কাঠামো
এ জেলার উত্তরে পঞ্চগড় জেলা, দক্ষিণে দিনাজপুর জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলা, পূর্বে দিনাজপুর জেলা ও পঞ্চগড় জেলার কিয়দংশ এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলা অবস্থিত। ঠাকুরগাঁও জেলার মোট আয়তন ১,৮০৯.৫২ বর্গকিমিঃ এবং ঢাকা থেকে জেলার দূরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার।
এ জেলার অনেকগুলো নদ-নদী রয়েছে যার মধ্যে আছে: টাঙ্গন নদী, ছোট ঢেপা নদী, কুলিক নদী, পুনর্ভবা নদী ইত্যাদি।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
১৭৯৩ সালে ঠাকুরগাঁও অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬০ সালে এটি মহকুমা হিসেবে ঘোষিত হয়। এর অধীনে ছয়টি থানা ছিল, এগুলো হলঃ ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, হরিপুর ও আটোয়ারী।
১৯৪৭ সালে এই ৬টি থানা এবং ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার ৩টি থানা ও কোচবিহারের ১টি থানা (পঞ্চগড়, বোদা, তেতুলিয়া ও দেবীগঞ্জ) নিয়ে ১০টি থানার মহকুমা হিসেবে ঠাকুরগাঁও নুতনভাবে যাত্রা শুরু করে।
কিন্ত ১৯৮১ সালে আটোয়ারী, পঞ্চগড়, বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেতুলিয়া নিয়ে পঞ্চগড় নামে আলাদা মহকুমা সৃষ্টি হলে ঠাকুরগাঁও মহকুমার ভৌগোলিক সীমানা ৫টি থানায় সংকুচিত হয়ে যায় এবং ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও ৬ নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিলো এবং এ সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন উইং কমান্ডার এম খাদেমুল বাশার।
ঠাকুরগাঁও ৩-৫ পর্যন্ত মোট ৩টি সংসদীয় আসন এবং জেলা ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপজেলাগুলো হলো:
- ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা
- পীরগঞ্জ উপজেলা
- বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা
- রানীশংকৈল উপজেলা
- হরিপুর উপজেলা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ঠাকুরগাঁও জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মধ্যে রয়েছে:
- ঠাকুরগাঁও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (প্রস্তাবিত)
- ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নির্মানাধীন)
- ঠাকুরগাঁও মেডিকেল কলেজ (স্থাপনের অপেক্ষায়)
- ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
- ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ
- ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজ
- ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়
সংস্কৃতি
এখানে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর (সাঁওতাল ও উরাও) মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে। জেলার নেকমরদ, রাণীশংকৈল এসব স্থানে সুপ্রাচীন সভ্যতার নির্দশন বিদ্যমান।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক প্রকাশিত কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ অনুযায়ী বাংলাদেশে গম উৎপাদনে শীর্ষ জেলা ঠাকুরগাঁও। খাদ্যশস্য গমের অধিক ফলনের কারণে ঠাকুরগাঁও-কে বাংলাদেশের রুটির ঝুড়ি বলা হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের মোজারেল্লা চিজ এ এলাকায় অনেক বেশি পরিচিত।
ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের স্থানীয় জনগণ সাধারণত কোচ রাজবংশীয় ভাষায় কথা বলে। এ ভাষাটি মূলত রাজবংশী, রংপুরী বা কামতাপুরী নামে পরিচিত যা ইন্দো-আর্য পরিবারভুক্ত একটি ভাষা।
এ জেলার পত্রপত্রিকার মধ্যে আছে: লোকায়ন, সাপ্তাহিক জনরব, দৈনিক আলোর কন্ঠ ইত্যাদি।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
ঠাকুরগাঁও জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন:
- রাজা গণেশ - যিনি বাংলার ইলিয়াস শাহি রাজবংশকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় আসেন।
- সুরবালা সেনগুপ্ত - ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিপ্লবী নেত্রী।
- কম্পরাম সিং - তেভাগা আন্দোলন, সাম্যবাদী কৃষক আন্দোলনের নেতা
- রাজা টংকনাথ চৌধুরী - মালদুয়ার পরগণার একজন জমিদার।
- নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় - বিখ্যাত টেনিদা চরিত্রের স্রষ্টা ভারতীয় বাঙালি লেখক
- মির্জা রুহুল আমিন - প্রাক্তন মন্ত্রী
- তৃপ্তি মিত্র - বাংলা ভাষার থিয়েটার ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেত্রী
- রমেশ চন্দ্র সেন - সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী
- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর - বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
- শিশির ভট্টাচার্য্য - চিত্রশিল্পী ও কার্টুনিস্ট
- লিটু আনাম - চলচ্চিত্র অভিনেতা ইত্যাদি
দর্শনীয় স্থানসমূহ
- জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ
- জামালপুর জমিদারবাড়ি
- ছোট বালিয়া মসজিদ
- হরিপুর রাজবাড়ি
- ঢোলার হাট মন্দির
- গোরক্ষনাথ মন্দির
- ফাতিমার রাণী মারীয়া গীর্জা
- রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি
- বাংলা গড়
- জগদল রাজবাড়ি
- গড়গ্রাম দুর্গ
- ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেড
- ২০০ বছরের পুরাতন বালিয়াডাঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী সূর্যপূরী আমগাছ যেটি এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম,
- বুড়ির বাঁধ
- রামরাই দিঘি - যেটি ঠাকুরগাঁও জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তর দিঘী
- ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর - যেটি ১৯৮০ সালের পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে
- হরিণমারী শিব মন্দির - যেটি প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি পুরাতন একটি মন্দির
- বালিয়াডাঙ্গীর চা বাগান
- পীরগঞ্জের থুমনিয়া শালবন
- অপরাজেয় ৭১
- টাঙ্গন ব্যারেজ
- শহীদ মোহাম্মদ আলী স্টেডিয়াম
- বলাকা উদ্যান
- রামরাই দিঘী
