আসসালামু-আলাইকুম, আশা করছি সবাই ভালোই আছেন। আজকের পোষ্টটি Grab4Learn এর শততম পোষ্ট। তাই পড়াশোনার বাইরে গিয়ে হরেকরকম জীবনপদ্ধতির একটি অংশ নিয়ে আজ আলোচনা হবে। সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। ইনশাল্লাহ সামনের দিকে আমরা হয়তো অনলাইন কোচিং সিস্টেমও চালু করতে পারি। সকলের সহযোগীতায় এগিয়ে যাবে আমাদের Grab4Learn পরিবার।
Ambivert (অ্যামবিভার্ট) মানে কি?
আমাদের মাঝে কেউ কেউ ইন্ট্রোভার্ট হয় আবার কেউ হয় এক্সট্রোভার্ট অর্থাৎ কেউ খুব মিশুক হয় কেউ আবার নিজের মত একা থাকে। কিন্তু এদের মাঝামাঝি আরেক ভাগ আছে যারা কখনো ইন্ট্রোভার্ট আবার কখনো এক্সট্রোভার্ট। যাদের বলা হয় অ্যামবিভার্ট।
'Ambivert' একটি ল্যাটিন শব্দ। ১৯২৭ সালে আমেরিকান মনস্তাত্ত্বিক কিম্বল ইয়ং প্রথম এই শব্দটি আবিষ্কার করেন। 'অ্যামবিভার্ট' শব্দটি মূলত দুটি শব্দের সংমিশ্রণে গঠিত। এর প্রথম অংশ 'Ambi' যার ইংরেজি অর্থ 'Round about' অর্থাৎ চারপাশে, আর পরের অংশ হল 'Vertara' যার ইংরেজি অর্থ হল 'To turn' অর্থাৎ ঘোরানো। আর এই শব্দের যে সমস্ত গুণাবলি রয়েছে এগুলোকে বলে 'Ambiversion'। এর বিপরীত শব্দ হল Introversion এবং Extroversion।
অ্যামবিভার্ট কারা?
‘A person who has a balance of extrovert and introvert features in their personality’-তারমানে অ্যামবিভার্ট এমন এক প্রকার মানুষদের সংজ্ঞায়িত করে, যারা একই সাথে একজন ইন্ট্রোভার্ট এবং এক্সট্রোভার্ট উভয়ের আচরণকে ধারণ করে থাকেন।’
সুইস মনস্তাত্ত্বিক রবার্ট আর. ম্যাকরে বলেন, ‘পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ মানুষ অ্যামবিভার্ট।’
আমেরিকান বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক এডাম এম. গ্রান্ট অ্যামবিভার্টদের বিশেষায়িত করতে গিয়ে বলেন- ‘পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষ অ্যামবিভার্ট।’ (যদিও তার এই মতামত নিয়ে বিস্তুর মতপার্থক্য রয়েছে)
অ্যামবিভার্টদের জীবন
জীবনে চলার পথে সবচেয়ে বেশি সমস্যা অ্যামবিভার্টদের হয়। যারা অ্যামবিভার্ট তারা মাঝে মাঝে খুব হৈ চৈ করতে ভালোবাসে আবার মাঝে মাঝেই একা থাকতে ভালোবাসে। এরা সহজে সবার সাথে মিশে যায় কিন্তু তবুও এদের অনেক ফ্রেন্ড থাকেনা আবার এরা একদম একাও থাকেনা।
গুটিকয়েক ফ্রেন্ড নিয়েই এরা থাকে। এদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো শত কষ্ট হলেও এরা মুখ ফুটে বলবেনা কিছু। বরং সেই কষ্ট সহ্য করেই হাসিমুখে থাকবে। তাই এদের মন খারাপ হলেও সেটা মুখে না বলা পর্যন্ত ধরা যায় যে কি চলছে তার ভেতর। 
এদের একটা আলাদা জগৎ থাকে। নিজেদের চারপাশে এরা একটা দেয়াল বানিয়ে নেয়। সে জগতে কেউ চাইলেই প্রবেশ করতে পারে না। বরং সেখানে প্রবেশ করার চাবি হচ্ছে আপনার ভালোবাসা আর ভরসা করার মতো ভালো ব্যবহার।
অ্যামবিভার্টরা যাকে ভালোবাসে তাকে খুব মন দিয়ে ভালোবেসে ফেলে। আর তাই কষ্টটাও বেশি পায়। কিন্তু তবুও এরা কারো খারাপ চাইবেনা কোনোদিন। এরা কারো প্রতি ভরপুর অনুভুতি রেখেও তার থেকে নিদিষ্ট দূরত্ব চলবে অথচ ওই মানুষটা চাইলেও সেটা বুঝাতে পারবে না। এদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় কেউই এদের বুঝতে পারেনা।
কারণ যে মানুষটা ঠিক একটু আগেই অনেক খুশি ছিলো হঠাৎ করেই সে বদলে গিয়ে একা থাকতে চাইলে কেউই সেটা ভালোভাবে নিবেনা। তখন বেশিরভাগই তাদের ভুল বুঝে। কেউই বুঝেনা এখানে এদের কোনো হাত নাই। কেউ চাইলেও এদের এই পরিবর্তন হওয়া আটকাতে পারবেনা।
অ্যামবিভার্টদের আচরণ
অ্যামবিভার্টদের নিয়ে পৃথিবীর মানুষদের মাতামাতি শুরু মাত্র বিংশ শতাব্দীতে এসে। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবেছেন! আপনি নিজে একজন অ্যামবিভার্ট কি না! বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের বিস্তর গবেষণা ইতিমধ্যে আমরা পেয়ে থাকি। একজন অ্যামবিভার্ট ধর্মী মানুষ কি ধরনের আচরণ করতে পারে, কিংবা একজন অ্যামবিভার্ট কিভাবে জীবন ধারণ করে এবং সেখানে বিশেষ কোনো দিক পরিলক্ষিত হয় কিনা এ সকল বিষয়ে মতামত দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নামীদামী গবেষকেরা। 
ডব্লিউএসজে এর অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, ‘অ্যামবিভার্টধর্মীয় মানুষেরা যখন ইন্ট্রোভার্টদের মত আচরণ করে (চুপচাপ একাকী) তখন তারা বিরক্ত হয়ে যায়, আবার যখন তারা এক্সট্রোভার্টদের মত আচরণ করে তখনও শেষে তারা বিরক্ত হয়ে যান। তাই এই আচরণের মানুষগুলো দুটো চরিত্রকেই ধারণ করে তৃতীয় আরেকটি চরিত্র প্রকাশ করে থাকে।’
ব্রিটিশ মনস্তাত্বিক 'ব্রায়ান লিটল' অ্যামবিভার্টদের বিশেষায়িত করতে গিয়ে বলেন- অ্যামবিভার্টধর্মী মানুষেরা তাদের জীবন চলার পথে নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে তুলনামূলক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করতে চায়। একজন অ্যামবিভার্ট কখনোই নিজের উপর অন্য কারো হস্তক্ষেপ মেনে নিতে চায় না।
অন্য অনেক মনস্তাত্বিক মনে করেন- এই ধরনের মানুষেরা একদিকে যেমন মনের দিক থেকে শক্ত হয়ে থাকেন অন্যদিকে যেকোনো কঠিন সময়ে ভেবে চিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
অ্যামবিভার্টরা মাঝে মাঝে নিজেদের ভীষণ একা ভাবে। কারণ মন খুলে কথা বলার মতো কেউ হয়তো নেই। এদেরকে শামুক বলা যায়। কারণ এরা বাহিরের দিকে শামুকের মতো শক্ত খোলস পরে থাকে কিন্তু এদের ভিতরটাও শামুকের শরীরের মতো নরম। তাদের নিজেদের জগতে যদি আপনি একবার ঢুকে যেতে পারেন,তখন বুঝবেন সে আসলে আপনার চেনার চেয়েও কতটা অন্যরকম। তখন হয়তো আপনি তাকে আরও বেশি ভালোবেসে ফেলবেন।
কিন্তু প্রবেশ করার অধিকার পেয়েও আপনি যদি তার সেই ভরসা-বিশ্বাস একবার ভেঙে ফেলেন তখন তার সেই জগৎ টা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সে তখন ভীষণ একা হয়ে যায়। অ্যামবিভার্টদের ঠকানো অনেক সহজ। কারণ হাজারবার ঠকলেও এরা আপনার নামে একটা অভিযোগও করবেনা। কিন্তু সেই ঠকে যায়। 
অ্যামবিভার্টদের বৈশিষ্ট্য
ইন্ট্রোভার্ট এবং এক্সট্রোভার্টদের ন্যায় অ্যামবিভার্টদের ও বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন-
- নতুন মানুষদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্কে জড়াতে অভ্যস্ত।
- খুব সহজেই মানুষদের বিশ্বাস করে থাকেন তবে একই সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ হলে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রকৃতিগত ভাবেই প্রস্তুত থাকে।
- প্রচুর পরিমাণে ভ্রমণ এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করে
- আত্মীয় কিংবা প্রতিবেশী সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় অত্যন্ত পারদর্শী।
- সিদ্ধান্ত নিতে ভেবে চিন্তে আশপাশের অন্য সকলের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত এমনভাবে নেয় যেনো কেউই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
- কাজের ক্ষেত্রে একত্রে অনেক মানুষের সঙ্গে কিংবা একাকী নিজের কাজ নিজে করে ফলতে পারেন।
- একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।
- একজন অ্যামবিভার্ট একজন দক্ষ সংগঠক।
এমন আরও কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে মূলত একজন অ্যামবিভার্ট বেঁচে থাকেন। এ সব বৈশিষ্ট্য নিয়েই একজন মানুষ অ্যামবিভার্ট হয়ে থাকে। বলুন তো আপনি কোন প্রকৃতির মানুষ! ইন্ট্রোভার্ট, এক্সট্রোভার্ট, নাকি অ্যামবিভার্ট?
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
	আরো দেখো:
	
